প্রাথমিক তথ্য-শাক সবজির চারা উৎপাদনের জন্য যে স্থান বা পাত্র ব্যবহার করা হয় ঐ স্থান/পাত্র হচ্ছে। বীজতলা। বীজতলা করতে হলে জমির অবস্থান, মাটির প্রকৃতি, জমির উর্বরতা, আলো বাতাসের প্রাপ্যতা, সেচ ও বীজতলার স্থান নির্বাচনে পোকামাকড়, রোগবালাই, পশুপাখীর আক্রমণ ও নিরাপদ পরিবেশ বীজতলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। উপযুক্ত জমি, ২। সেচ/নিকাশ পাম্প, ৩। কাগজ-কলম, ৪। জমির অবস্থান ম্যাপ এবং আশে পাশে বাড়ি, গাছপালার তথ্য ৫। যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কাজের ধাপ
১. বীজতলার জন্য উর্বর দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ মাটির জমি নিতে হবে।
২. বীজতলার জমি উঁচু ও বন্যা বা জলাবদ্ধমুক্ত হতে হবে। এ ব্যাপারে বিগত কয়েক বছরের তথ্য সংগ্রহ করা উচিত।
৩. বীজতলায় পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে কিনা এবং ঘর-বাড়ি বা গাছপালার ছায়া পড়ে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করে প্রচুর আলোবাতাসযুক্ত জমি হলে তা নির্বাচন করতে হবে।
৪. বীজতলায় পুশু-পাখির আক্রমণ হওয়ার সুযোগ থাকলে বা বিষাক্ত গ্যাস, কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য প্রবেশের সম্ভাবনা থাকলে সে জমি বাদ দিতে হবে।
৫. বীজতলার মাটিতে প্রচুর বাতাস প্রবেশের জন্য গোবর সার, কম্পাস্টে সার বা আবর্জনা পঁচা সার দেয়ার সুযোগ থাকলে সে স্থান বীজতলার জন্য উত্তম, যা বিবেচনা করতে হবে।
৬. জীব জন্তু, পশুপাখি চলাচল করে যেখান দিয়ে সেরূপ স্থান বাদ দিতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য- অনেক সবজির চারা উৎপাদন করে মূল জমিতে পরে রোপণ করা হয়। এ চারা প্রথমে উৎপাদন করা হয় বীজতলায় । বীজতলা যদি সঠিক আকৃতরি ও সঠিক মাপের না হয় তাহলে চারা উৎপাদনে সমস্যা হয়। সাধারণত কপি জাতীয়, বেগুন, টমেটো, পেঁপে ইত্যাদি সবজি রোপণের জন্য বীজতলায় চারা উৎপাদন করা হয়। বীজতলা প্রয়োজন ও অবস্থাভেদে অনেক সময় স্থায়ী, অস্থায়ী বা স্থানান্তরযোগ্য করা হয়।
বীজতলার আকার মিটার চওড়া, ৭-৮ সেমি (রবি মৌসুমে) বা ১০-১৫ সেমি. (বর্ষা মৌসুমে উঁচু ও একাধিক বীজতলা হলে দুই বীজতলার মাঝখানে ৩০ সেমি. চওড়া ফাঁকা জায়গা রাখতে হয়, যা সেচ-নিকাশ ও পরিচর্যার জন্য চলাফেরার কাজে প্রয়োজন হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। কোদাল, ২। আচড়া/বিদা, ৩। মাপার টেপ, ৪। লাঙ্গাল, ৫। মই, ৬। খুটি। ৭। খাতা কলম ।
কাজের ধাপ
১. কোন ছায়া পড়ে না এরুপ উঁচু জমি বীজতলার জন্য নিতে হবে।
২. জমি চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে করে তৈরি করে সমতল করতে হবে।
৩. চাষ-মই দেয়ার পর আগাছা, ঢেলা পরিষ্কার করতে হবে।
৪. টেপ ধরে বীজতলার ও নালার জায়গা মেপে খুঁটি পুঁতে চিহ্নিত করতে হবে। প্রতিটি বীজতলার আকার হবে গ্রন্থ। বা চওড়া ১ মিটার দৈর্ঘ্য বা লম্বা ৩ মিটার অথবা প্রয়োজন অনুযায়ী আরও দৈর্ঘ্য (সাধারণত ৩ ১ মিটার)।
৫. সেচ-নিকাশ ও পরিচর্যা কাজে চলাচলের জন্য ২টি বীজতলার মাঝে ৩০ সেমি, ও বীজতলার চারপাশ দিয়ে ১৫-২০ সেমি. চওড়াভাবে স্থান রেখে দিতে হবে। -
৬. দুটি বীজতলার মাঝখানের ও চারপাশের মাটি কোদালের সাহায্যে তুলে বীজতলার উপরে ছিটায়ে দিয়ে জমি সমতল হতে বীজ তলাকে ৭-১৫ সেমি. (সময়ভেদে) উঁচু করতে হবে। এতে মাঝ খানে নালা তৈরি হবে।
৭ . বীজতলা শুকনা ধরনের হলে বৃষ্টিতে যাতে পাশে ভেঙ্গে না পড়তে পারে সেজন্য বাঁশের চটা দিয়ে ছোট খটি পুঁতে দিতে হবে।
৮. বীজতলা কাদাময় হলে জমির উপর দিয়ে লাঠির সাহায্যে সমান করে দিতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য বীজতলার তৈরির পর সাধারণত বীজতলায় বীজ গজানোর আগে সেচ দিতে হয় না। তবে চারা গজানোর পর সকাল বিকাল ঝাঁঝরি দিয়ে খুব নিচু হতে হালকা করে সেচ দিতে হয়। বীজতলার মাটিতে চটা বেঁধে গেলে চারার ক্ষতি হয়। তাই খুঁচিতে চটা ভেঙ্গে দিতে হয়। বৃষ্টি হয়ে চারার গোড়া বেঁকে গেলে সোজা করে ২-৩ সেমি পর্যন্ত পুরু করে গুড়ো মাটি দিতে হয়। সারি করে বীজ বুনলে সারির মাঝখান দিয়ে মাটি দিতে হয়। চারা কচি অবস্থায় রাদে হতে বাঁচানোর জন্য চালা করে দিতে হয়। রাতে কুয়াশা পাওয়ার জন্য চালা বিকেলেই সরিয়ে দিতে হয়। বীজতলার চারায় অনেক সময় পোকার আক্রমণ ও রোগ দেখা যায়। বীজতলায় কিছু কিছু আগাছাও জন্মে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ- ১। ঝাঁঝরি, ২। বাঁশের চটা, ৩। ছোট খুটি, ৪। কাঠি লাঠি, ৫। ঝুরঝুরে বা গুড়ো শুকনো মাটি, ৬। নিড়ানি, ৭। বাঁশের চাটাই/চালা, ৮। বালাইনাশক, ৯। স্প্রে মেশিন, ১০। বালতি, ১১। মাক্স হ্যান্ড গোব, এ্যাপ্রোন, ১২। খাতা কলম ।
কাজের ধাপ
১. বীজতলায় বীজ বপনের পর বীজ গজানোর আগে সেচ দেওয়া উচিত নয়। তবে বীজতলায় জো অবস্থা না থাকার সম্ভাবনা থাকলে বীজ বপনের আগেই সেচ দিয়ে নিতে হবে।
২. চারা গজানোর পর বীজতলা শুকায়ে গেলে ঝাঝরি দিয়ে নিচু হতে হালকা সেচ দিতে হয় এবং বীজতলায় চটা। ধরলে কাঠি বা নিড়ানি দিয়ে চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।
৩. বৃষ্টিজনিত কারণে বা বৈরী আবহাওয়ায় গজানো চারা অনেক সময় বেঁকে যেতে পারে। এরূপ অবস্থা হলে শুকনো ঝুরঝুরে মাটি নিয়ে কাঠি দিয়ে চারা সোজা করে পাশ দিয়ে গুড়ো মাটি ছাড়ায়ে দিতে হবে, তাতে চারা সোজা হয়ে থাকবে।
৪. রোদে সদ্য গজানো চারা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তাই দিনে রোদের সময় বীজতলার উপরে প্রায় ১.৫ ফিট উঁচু করে চালা দিয়ে দিতে হয়। চালাটা একদিকে একটু ঢালু করে দিতে হয়। চালার গ্রন্থ হবে বীজতলার প্রন্থের চাইতে ৫-৭ সেমি. বেশি ।
৫. বীজতলায় আগাছা দেখা দিলে তা উঠায়ে ফেলতে হবে। ৬. পোকামাকড় বা রোগবালাই বিশেষত চারার গোড়া পঁচা রোগ দেখা দিলে প্রতিরোধক হিসেবে মাটি শোধনকারী ও কপার মিশ্রিত বালাইনাশক স্প্রে করে মাটি ও চারা সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিতে হয়। পোকা-মাকড় ও রোগ দেখা মাত্র দমন করতে হবে।